চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের পাহাড় রক্ষায় নিয়মিত অভিযানের জন্য টাস্কফোর্স এবং দ্রুত বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি এসেছে এক সমাবেশ থেকে।
শনিবার বিকেলে বন্দর নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েস এ সমাবেশের আয়োজন করে।
২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম মহানগর এবং ২০১৭ সালে রাঙমাটি ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে নিহতদের স্মরণে এ নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঁচটি দাবি উত্থাপন করে সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, “যারা পাহাড় দখল করেছেন, তাদের তালিকা পাহাড় রক্ষা কমিটি করেছিল। কারও বিরুদ্ধে আজও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি এত বছরেও সফল হতে পারেনি। এত উচ্চপদস্থ কমিটি যদি সফল না হয়, তাহলে সফল হচ্ছে কারা?
সরকারি সব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী, পরিবেশ ও ভূমিসহ সম্পৃক্ত সবাইকে নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাহাড়খেকোদের বিচার করতে হবে।
“কারণ পরিবেশ আদালতে সাক্ষী হাজির হয় না। ফলে মূল হোতারা পার পেয়ে যায়। শাস্তি পায় শুধু গরিব মাটিকাটা শ্রমিকরা।”
অন্য দাবির মধ্যে আছে – ১১ জুনকে জাতীয় পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণা, ২০০৭ সালে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষা করে সকল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা।
সমাবেশে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এ পর্যন্ত শত শত তদন্ত কমিটি আমরা দেখেছি। এতে আর মানুষের মন ভোলে না। পাহাড় তো শুধু চট্টগ্রামের নয়, সারাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ।
“পাহাড় কেটে শেষ করা হয়েছে, আজ কর্ণফুলী ভরাট হওয়ার পথে। এ শুধু পাহাড় কাটা নয়, আমাদের প্রকৃতিকে ধ্বংস করার এক গভীর ষড়যন্ত্র। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা মানুষের কাতারে নেমে এসে পাহাড় নদী রক্ষা না করলে সামনে সমূহ বিপদ।”
সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা বলেন, “এখন দেশে কে কোথায় কিভাবে কী খেয়ে লোপাট করে দেবে, তাই চলছে। দখল, মৃত্যু ও লুটতরাজ বন্ধ হয় না। এমন এক পরিস্থিতিতে আছি।
“এত লুটপাটে ক্ষমতাভোগীরা কষ্ট পায় না, সাধারণ মানুষই মৃত্যুবরণ করে। আমাদের জন্য বিষময় ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। পরিত্রাণের জন্য সবাইকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।”
ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, “লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা। কিন্তু জনগণ আজ দেশের মালিকানা অনুভব করতে পারছে না। অশ্লীল নিষ্ঠুর মুনাফাখোরদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষের ক্ষোভের প্লাবন হবে।”
অপরাজনীতি ও অপ-ব্যবসায়ীরা সব কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাব, চট্টগ্রামে যেসব অপকর্ম হচ্ছে তা থামান। চট্টগ্রামের মানুষের আজ অরক্ষিত অবস্থা। আপনার উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাথে এসব যায় না। এভাবে চলতে পারে না।”
কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, “পাহাড় কাটলে বিচার হয় গরিবের। বড়লোকের কোনো বিচার হয় না। পাহাড়ের পাদদেশে যারা থাকে, তারা গরিব মানুষ। পাহাড় ধসে মারাও যায় তারা। এই শহরে সরকারি সংস্থা সিডিএ যখন বায়েজিদ লিংক রোড বানায় পাহাড় কাটে, তখন তো বাকিরা উৎসাহিত হয়।”
নেপথ্যের দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হয় না বলেই পাহাড় কাটা চলছে মন্তব্য করে প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি শিল্পী রাশেদ হাসান বলেন, “প্রকৃতির উপর অত্যাচারে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয় বলেই পাহাড়ধস হয়। সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর ঘটনায় দোষীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করে শাস্তির দাবি জানাই।”
সমাবেশে সংহতি জানানো সংগঠনগুলোর মধ্যে আছে পাহাড়ি শ্রমিক কল্যাণ পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস), দৃষ্টি, ত্রিতরঙ্গ আবৃত্তি দল, পার্ক।
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম