আইনপ্রণেতা হাজি সেলিম দণ্ড নিয়ে কারাগারে

0

আদালত প্রতিবেদক: দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত পুরান ঢাকার সংসদ সদস্য হাজি সেলিম আত্মসমর্পণ করার পর জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

ঢাকার ৭ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারক শহীদুল ইসলাম রোববার হাজি সেলিমের জামিন আবেদনের শুনানি করে এই আদেশ দেন।

সংসদ সদস্য হিসাবে হাজি সেলিমকে কারাগারে ডিভিশন দেওয়ার আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবীরা। বিচারক এক্ষেত্রে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

আপিলের শর্তে বা যে কোনো শর্তে হাজি সেলিমের জামিনের পক্ষে শুনানি করেন তার আইনজীবী শ্রী প্রাণনাথ ও সাইয়েদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল জামিনের বিরোধিতা করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে কারাগারে ডিভিশন ও সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে বলেন, হাজি সেলিম মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে বাকশক্তি হারিয়েছেন।

শুনানি শেষে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

রোববার বেলা ৩টার পর হাজি সেলিম গাড়িতে করে আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। তার বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকেই আদালতের প্রবেশ মুখে ও বাইরে পুলিশের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।

দুদকের করা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের যে মামলায় হাজি সেলিমের সাজা হয়েছে, সেটি দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে।

পরের বছর ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালত তাকে দুই ধারায় মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়। পাশাপাশি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার অভিযোগে হাজি সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

হাজি সেলিম এবং তার স্ত্রী ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করলে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালত তাদের সাজা বাতিল করে রায় দেয়। দুদক তখন সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে।

ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাই কোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজি সেলিমের আপিল পুনরায় হাই কোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।

সেই শুনানি শেষে গত বছরের ৯ মার্চ হাই কোর্ট বেঞ্চ একটি ধারায় হাজি সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখে এবং অন্য ধারায় ৩ বছরের সাজা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়।

আর আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় বিচারিক আদালতের রায়ে দণ্ডিত হাজি সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমের আপিলটি বাতিল করা হয়।

ওই বেঞ্চের দুই বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এবং এ কে এম জহিরুল হকের স্বাক্ষরের পর ৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজি সেলিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।

এদিকে দণ্ড মাথায় নিয়েই হাজি সেলিম রোজার ঈদের আগের দিন ২ মে চিকিৎসার কথা জানিয়ে ব্যাংকক চলে যান।

সেসময় দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, সাজাপ্রাপ্ত হাজী সেলিমের বিদেশ যাওয়ার ‘আইনি কোনো সুযোগ নেই’।

অন্যদিকে দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি না পাওয়া এবং দণ্ডিত হাজী সেলিমের যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপি নেতারা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, হাজী সেলিমের বিদেশ যাওয়া ও ফিরে আসায় আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে ঈদের পর ৫ মে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরেন হাজি সেলিম।

পুরান ঢাকার সংসদ সদস্য হাজী সেলিম আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উপদেষ্টমণ্ডলীতে রয়েছেন। বিগত কমিটিতে তিনি সদস্য ছিলেন। তার আগে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here