আবুল মাল আবদুল মুহিতের জীবনাবসান

0

নিজস্ব প্রতিবেদক: তার কাছে জীবন ছিল ‘মহাতৃপ্তির, মহাপ্রাপ্তির’, ৮৮ বছরের সেই কর্মময় জীবনের যবনিকা টেনে চিরবিদায় নিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

শুক্রবার রাত ১২টা ৫৬মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মুহিতের মৃত্যু হয়। তার ছোট ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ মোমেনের বরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বার্তায় এ খবর জানায়।

গতবছর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই বর্ষীয়ান সদস্য। বার্ধক্যের নানা সমস্যাও পেয়ে বসেছিল।

শারীরিক দুর্বলতার কারণে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলে মার্চের প্রথম সপ্তাহে। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ফিরে গিয়েছিলেন নিজের জেলা সিলেটে।

১৬ মার্চ সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দেওয়া সম্মাননা গ্রহণ করে মুহিত বলেছিলেন, “আমি আমার জীবনকে নিয়ে গর্বিত।… অনেকে হয়ত একে আত্মগরিমা বলবেন। কিন্তু এটা অন্যায় নয়। বরং এরজন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয়।”

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভার দিয়েছিলেন মুহিতের ওপর। সেই দায়িত্ব তিনি পালন করে গেছেন টানা দশটি বছর।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সরকারপ্রাধন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানিয়েছেন সমবেদনা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্তায় জানানো হয়েছে, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশান আজাদ মসজিদে এবং সাড়ে ১১টায় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দুই দফা জানাজা হবে মুহিতের।

সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বেলা ২টায় তার কফিন নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখান থেকে দাফনের জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হবে জন্মভূমি সিলেটে।

সংসদে সর্বোচ্চ ১২ বার বাজেট দেওয়া সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন সিলেট-১ আসনের সাংসদ। ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তার জন্ম।

পঞ্চাশের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর করে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন মুহিত।

ছাত্রজীবনে সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সক্রিয় ছিলেন ভাষা আন্দোলনেও।

১৯৫৬ সালে মুহিত যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। কূটনীতিকের দায়িত্বে তাকে পাঠানো হয় পাকিস্তানের ওয়াশিংটন দূতাবাসে। একাত্তরের জুন মাসে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন।

১৯৭২ সালে পরিকল্পনা সচিবের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিবের হন মুহিত। ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে ‘অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে’ কাজ শুরু করেন ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও আইএফএডি-তে।

১৯৮২-৮৩ সালে তখনকার এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে প্রথমবারের মত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন মুহিত।

দীর্ঘদিন বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন মুহিত।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ‘দিন বদলের’ সরকারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হাল ধরেন মুহিত। টানা দশ বছর সেই দায়িত্ব সামলে অনেকটা নিভৃতে, পরিবারের কাছে কাটছিল তার সময়।

গত ১৬ মার্চ নিজের জেলার মানুষের সম্মাননায় সিক্ত হয়ে আবেগ আপ্লুত মুহিত বলেছিলেন, “আমি একান্তভাবে সিলেটের মানুষ। আমার জন্মভূমি আমার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছে এটার চেয়ে বড় প্রাপ্তি তো আর কিছু হতে পারে না।”

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here