কানাডার ‘ফাইভ জি’ নেটওয়ার্কে নিষিদ্ধ চীনের হুয়াওয়ে-জেডটিই

0

প্রযুক্তি ডেস্ক: নিজস্ব ফাইভ জি নেটওয়ার্কে চীনের দুই টেলিকম যন্ত্রাংশ নির্মাতা হুয়াওয়ে ও জেডটিইর তৈরি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কানাডা।

দেশটির শিল্প মন্ত্রী ফ্রঁসোয়া ফিলিপ শ্যাম্পেইন বৃহস্পতিবার নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই ঘোষণা দিয়ে বলেন, এর ফলে কানাডার মোবাইল ইন্টারনেট সেবা আরও উন্নত হবে এবং কানাডীয়দের ‘নিরাপত্তা ও গোপনতা’ নিশ্চিত হবে।

হুয়াওয়ে ও জেডটিইর ওপর ইতোমধ্যে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড।

কানাডা এবং ওই চারটি দেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রধানের সমঝোতা থাকায় একযোগে ‘ফাইভ আইস’ বা ‘ফাইভ আইস অ্যালায়েন্স’ নামে পরিচিত দেশগুলো।

‘ফাইভ আইস’ বা পঞ্চ চোখের সূত্রপাত সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পশ্চিমা শক্তির স্নায়ুযুদ্ধ থেকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর নজর রাখা এবং গোপন গোয়েন্দা তথ্য আদান প্রদানের লক্ষ্যেই গড়ে উঠেছিল পাঁচ দেশের জোটটি।

বিবিসি লিখেছে, মিত্র দেশগুলো হুয়াওয়ে এবং জেডটিইকে নিজস্ব ৫জি নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর নির্মাণে নিষিদ্ধ করার পর কানাডার কাছ থেকে এমন পদক্ষেপ প্রত্যাশিতই ছিল।

রাজধানী অটায়াতে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় শ্যাম্পেইন বলেন, “নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বিশ্লেষণ এবং কাছের মিত্রদের পরামর্শ নিয়েই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

“আমরা সবসময়ই কানাডিয়ান নাগরিকদের নিরাপদ রাখব এবং আমাদের টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় সব কিছুই করব,” বলেন তিনি।

এর প্রতিক্রিয়ায় অটোয়ায় চীন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, কানাডা যে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা বলছে, বেইজিং তাকে ‘রাজনৈতিক অজুহাত’ হিসেবে দেখছে।

চীনের কোম্পানিগুলোকে ‘চাপে রাখতে’ কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেন ওই মুখপাত্র।

বিবিসি লিখেছে, কানাডার শিল্প মন্ত্রীর ঘোষণার পর হুয়াওয়ে ও জেডটিইর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া তারা পায়নি।

মোবাইল ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির পরবর্তী উচ্চতর ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ফাইভজিকে। এই প্রযুক্তিতে ডেটা ডাউনলোড ও আপলোডের গতি আরও বাড়বে। পাশাপাশি আরও বেশি সংখ্যক ডিভাইস ইন্টারনেটে সংযুক্ত হতে পারবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিডিও ও মিউজিক স্ট্রিমিং সেবাগুলোর জনপ্রিয়তা লক্ষণীয় হারে বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে উচ্চগতির ডেটা আদান-প্রদান প্রযুক্তির চাহিদা বেড়েছে। ফলে বিভিন্ন দেশের সরকার এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটররা নিজস্ব অবকাঠামো আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে।

এমন পরিস্থিতিতে কানাডা সরকারের নিষেধাজ্ঞার ফলে নিজস্ব টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে হুয়াওয়ে এবং জেডটিইর তৈরি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে পারবে না দেশটির মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটররা।

আর যে অপারেটররা ইতোমধ্যে নিজস্ব অবকাঠামোতে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করছেন, তাদের সেসসব যন্ত্রাংশ বা হার্ডওয়্যার সরিয়ে ফেলতে হবে বলে জানিয়েছেন শ্যাম্পেইন।

২০১৮ সালেই হুয়াওয়ের যন্ত্রাংশ নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছিল কানাডা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে চীনের প্রযুক্তি ও টেলিকম কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নভেম্বর মাসেই নতুন এক আইনে স্বাক্ষর করেছেন। ওই আইনে দেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত কোম্পানিগুলোর টেলিকম যন্ত্রাংশ বিক্রির লাইসেন্স পাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এর ফলে মার্কিন টেলিকম খাতে হুয়াওয়ে, জেডটিইসহ আরও তিনটি চীনা কোম্পানির যন্ত্রাংশ কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here