‘কোভিড-১৯’য়ের সংস্পর্শে এসেছেন এমনটা বোঝার উপায়

0

লাইফস্টাইল ডেস্ক: লক্ষণ না থাকলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি-না তা বোঝার রয়েছে উপায়।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো কারও মাঝে দেখা দেয়, কারও মাঝে দেয় না। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ এই ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হয়নি। তবে এমন অসংখ্য মানুষও আছেন যারা আক্রান্ত হয়েছেন ঠিকই কিন্তু উপসর্গ না থাকায় বুঝতেই পারেননি।

মানুষের মনেও ব্যাপারটা নিয়ে সন্দেহ আছে যথেষ্টই।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে আক্রান্ত হয়েও বুঝতে না পারার সম্ভাবনা আরও বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেশন (সিডিসি)’র তথ্য মতে, “করোনাভাইরাসের সাম্প্রতিক ধরন ‘ডেল্টা’ অত্যন্ত সংক্রমণক্ষম। প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে এক হাজার জনই এর সংস্পর্শে এসেছে গড় হিসেবে। এমনকি দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, অসুস্থও হচ্ছেন।”

এখন প্রশ্ন হল তাহলে কীভাবে বুঝবেন ‘কোভিড-১৯’য়ের সংস্পর্শে এসেছেন কি-না।

স্যান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মনিকা গান্ধি ‘হাফপোস্ট’কে জানান, “ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’য়ের সংক্রমণ ক্ষমতা এতই বেশি যে, আমি মনে করি আপনার চারপাশে আক্রান্ত ব্যক্তি থাকলে আপনিও যে এর সংস্পর্শে এসেছেন তা সম্ভাবনা খুবই প্রবল।”

জন হপকিন্স স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’য়ের ‘এপিডেমিওলজিস্ট’ ড. জেনিফার নাজ্জো একই প্রতিবেদনে বলেন, “যেহেতু ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’ প্রচণ্ড সংক্রমণক্ষম, সেহেতু মাস্ক না পরে, সামাজিক দূরত্ব না মেনে টিকা নিয়েছে কি-না জানা নেই এমন মানুষের ভীড়ে যদি উপস্থিত থাকেন তবে আপনি যে ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন তার সম্ভাবনা জোরালো।”

তিনি আরও বলেন, “ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা মানেই যে আপনি সংক্রমিত বা আক্রান্ত হয়ে যাবেন ব্যাপারটা এমন নয়। সেটা নির্ভর করবে আপনার আশপাশের মানুষগুলো কতটা আক্রান্ত, আপনি তাদের সঙ্গে কতক্ষণ সময় কাটিয়েছেন, ওই মানুষগুলো কী হারে ভাইরাস ছড়াচ্ছে, যে স্থানে আপনারা আছেন সেখানে বাতাস চলাচল ব্যবস্থা কেমন ইত্যাদি বিষয়ের ওপর।”

মানুষের কাছাকাছি থাকা, লম্বা সময় এক সঙ্গে কাটানো, ভাইরাস যদি তারা বেশি ছড়ায় এবং ওই স্থানের বাতাস চলাচল ব্যবস্থা যদি দুর্বল হয় তবে আপনার ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া খুবই সম্ভব।

এরপর আসবে আপনার নিজের শরীরের বিষয়। ভাইরাস শরীরের প্রবেশের তার বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিক্রিয়া কেমন? টিকা কিংবা আগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে কোনো ‘ইমিউনিটি’ আছে কি-না এই বিষয়গুলোও বিবেচনায় আসবে।

‘হাফপোস্ট’য়ের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, “টিকা নিয়েছেন এমন ব্যক্তি ভাইরাসের সংস্পর্শে আসলে বুঝতে পারার সম্ভাবনা কম। এর কারণ হলো টিকা ভাইরাসে বিরুদ্ধে একটা ‘ইমিউনিটি’ তৈরি করে যা মানুষ ও টিকা ভেদে ভিন্ন। ফলে কোনো উপসর্গ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কমে।

কিছু মানুষ টের পান যে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কোনো কিছুর বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে। সেই উপলদ্ধিগুলো টিকা নেওয়ার পর যে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, অনেকটা সেই রকমই।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া, সক্রিয়া হওয়ার উপসর্গগুলো একইরকম।

ডা. মনিকা গান্ধি ভাষায়, “টিকা নেওয়ার পরও যদি কেউ ভাইরাসের যথেষ্ট পরিমাণ সংস্পর্শে আসেন তবে তারা ক্লান্ত অনুভব করতে পারেন।”

‘হেল্থলাইন ডটকম’য়ের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, “করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে কেউ এসেছে কি-না তা নিশ্চিতভাবে জানার উপায় একটাই। আর তা সংক্রমণ সক্রিয় থাকা অবস্থায় পরীক্ষা করানোর পর ফলাফল ‘পজিটিভ’ আসা। ‘অ্যান্টিবডি টেস্ট’য়ে আসা ‘পজিটিভ’ ফলাফল ভুল হতে পারে, যদিও সেই সম্ভাবনাটা ক্ষীণ।”

কারও যদি মনে হয় সে ‘কোভিড-১৯’য়ে আক্রান্ত, তবে তার করণীয় নির্ভর করবে টিকা নেওয়ার ওপর।

সিডিসি’র মতে, যারা টিকা নেননি তাদের উপসর্গ দেখা দিলে ১৪ দিন ‘কোয়ারেন্টাইন’য়ে থাকতে হবে।

এসময় ‘কোভিড-১৯’য়ের আরও কোনো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কি-না সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে।

কোনো উপসর্গ দেখা দিলে নিজেকে একদম আলাদা করে ফেলতে হবে, পরীক্ষা করাতে হবে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।

আর যারা টিকা নিয়েছেন তাদের কারও যদি মনে হয় বা নিশ্চিত হন যে করোনাভাইরাসের আক্রমণের শিকার হয়েছেন, তবে তিন থেকে পাঁচ দিন পর পরীক্ষা করাতে হবে।

যেখানেই থাকুন না কেনো মাস্ক পরতে হবে। পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ ফলাফল না আসা পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে কঠোরভাবে।

 

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here