ক্যাপিটলে দাঙ্গার শুনানিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থানচেষ্টার’ অভিযোগ

0

নিউজ ডেস্ক: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প গত বছর ক্যাপিটলে দাঙ্গা বাধিয়ে ‘অভ্যুত্থানের চেষ্টা’ করেছিলেন বলে অভিযোগ শোনা গেছে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত কংগ্রেসনাল তদন্তের শুনানিতে।

তদন্ত কমিটির রিপাবলিকান ভাইস চেয়ার লিজ চেনি বলেছেন, ট্রাম্পই ওই হামলা ‘উসকে দিয়েছিলেন’। আর ডেমোক্র্যাট বেনি থমসন মন্তব্য করেছেন, ক্যাপিটলের ওই দাঙ্গা মার্কিন গণতন্ত্রকে বিপন্ন করেছে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি দিতে গত বছরের ৬ জানুয়ারি মার্কিন আইনপ্রণেতাদের অধিবেশন চলাকালে ট্রাম্প সমর্থকরা কংগ্রেস ভবনে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছিল।

প্রায় এক বছরের তদন্ত শেষে ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সিলেক্ট কমিটি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কয়েকজনের সাক্ষ্যের ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা থেকে শুনানি শুরু করে, জানিয়েছে বিবিসি।

দেখানো হয় সাবেক মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বারের সাক্ষ্যও, যেখানে সাবেক এই আইন কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে ট্রাম্পের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছেন।

“আমরা এমন একটি বিশ্বে বাস করি না যেখানে ক্ষমতাসীন প্রশাসন নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেখানো ছাড়া কেবল নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে ক্ষমতায় থেকে যেতে পারবে,” বলেছেন সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল।

শুনানিতে ট্রাম্পকন্যা ইভাঙ্কার সাক্ষ্যের রেকর্ডিংও দেখানো হয়েছে। বার যেভাবে ট্রাম্পের ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে’ খারিজ করে দিয়েছিলেন, সাক্ষ্যে ইভাঙ্কাকে তা ‘মেনে নিতেও’ দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবারেরটাসহ চলতি মাসে এ ধরনের ৬টি শুনানি হওয়ার কথা। এসব শুনানি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।

ট্রাম্প এরই মধ্যে এই শুনানিকে ‘রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজি’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। বাইডেন যে নির্বাচনে জিতেছেন, সেখানে ব্যাপক ভোটার জালিয়াতির মাধ্যমে কারচুপির অভিযোগ করা সাবেক এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।

কংগ্রেসনাল কমিটির চেয়ারম্যান, মিসিসিপির আইনপ্রণেতা থমসন শুনানিতে বলেছেন,“ ৬ জানুয়ারি ছিল অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার চূড়ান্ত পর্ব, একটি নির্মম প্রচেষ্টা। এটা যে সরকার উৎখাতের চেষ্টা ছিল তা জানুয়ারির পরপরই একজন লিখেছিলেন। ওই সহিংসতা দুর্ঘটনাক্রমে হয়নি, সেটা ছিল ট্রাম্পের শেষ চেষ্টা।”

রিপাবলিকান চেনি বলেছেন, “যারা আমাদের ক্যাপিটলে হানা দিয়েছিল, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল, তারা নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এবং তিনিই ন্যায়সঙ্গত প্রেসিডেন্ট, ট্রাম্পের এমন কথায় অনুপ্রাণিত হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদেরকে ডেকে এনেছিলেন, একত্রিত করেছিলেন এবং আক্রমণের শিখা জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।”

রিপাবলিকানরা টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এই শুনানিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগের ৫ মাস যে কঠিন পরিস্থিতি আসছে ডেমোক্র্যাটদের জন্য, তা থেকে মার্কিনিদের চোখ সরাতে এই নাটক করা হচ্ছে।

বিভিন্ন জনমত জরিপে নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা প্রতিনিধি পরিষদ ও সেনেটের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

ভয়াবহ মুল্যস্ফীতি, জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বগতি ও শিশুখাদ্যের সংকটের কারণে ডেমোক্র্যাট বাইডেনের প্রতি ভোটারদের আস্থা মেয়াদের একই সময়ে ট্রাম্পের ওপর যতজনের আস্থা ছিল তার চেয়েও কম দেখা যাচ্ছে।

প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থি ক্যাপিটলে দাঙ্গার পর ট্রাম্পের সমালোচনা করলেও পরে সুর বদলে ফেলেছেন। তিনি ৬ জানুয়ারি নিয়ে কংগ্রেসের তদন্ত কমিটিকে ভোট সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনের লক্ষ্যে ডেমোক্র্যাটদের সৃষ্ট ‘ধূম্রজাল’ হিসেবে দেখছেন।

প্রতিনিধি পরিষদের ওই দাঙ্গার পর ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি পরিষদ মেয়াদ শেষ হওয়ার সপ্তাহখানেক আগেই ট্রাম্পকে অভিশংসিত করেছিল, যদিও সেনেটে তিনি খালাস পেয়ে যান।

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here