‘ঘোস্ট অব কিইভ’ বাস্তব চরিত্র নয়, স্বীকার ইউক্রেইনের

0

নিউজ ডেস্ক: অনেক রুশ বিমান তিনি ভূপাতিত করেছেন, বেঁচে গিয়েছিলেন অনেক হামলা থেকে, ইউক্রেইনের কার্যকর বিমান প্রতিরক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন, যুদ্ধকালীন সাহসী এক উপাধিও তিনি অর্জন করেছেন- ‘ঘোস্ট অব কিইভ’ বা ‘কিইভের ভূত’।

ইউক্রেনীয়দের প্রচারে এই ‘ঘোস্ট অব কিইভ’ বাস্তব চরিত্র হয়ে উঠলেও এখন দেখা যাচ্ছে, এটি একটি মিথ বা লোককথা।

শনিবার ইউক্রেইনের বিমানবাহিনীর একটি ফেইসবুক পোস্টের বরাতে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

ওই পোস্টে লেখা হয়েছে, “ঘোস্ট অব কিইভ একজন সুপারহিরো-মহানায়ক, যে চরিত্রটি গড়েছেন ইউক্রেনীয়রা!”

এই বক্তব্যের মাধ্যমে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলে আসা গুজব উড়িয়ে দেওয়া হল, যাতে ইউক্রেইনের কর্তৃপক্ষও এক সময় বাতাস দিচ্ছিল।

পশ্চিমা কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে গত মার্চে বিমান যুদ্ধে নিহত ২৯ বছর বয়সী মেজর স্তেপান তারাবালকাকে যখন ‘কিইভের ভুত’ হিসেবে চিহ্নিত করার মধ্যেই এখন আসল কথা বের হল।

এর আগ পর্যন্ত ইউক্রেইন ও পশ্চিমা বিশ্বের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ট্যাবলয়েড প্রকাশনাগুলোতে কাল্পনিক এই দুঃসাহসী চরিত্রকে একটি বাস্তব চরিত্র হিসেবেই প্রায় বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হয়েছিল।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে তথ্য যুদ্ধে ইউক্রেইনের এই প্রপাগান্ডা তাদের যুদ্ধের একটি সাফল্যের গল্পে পরিণত হয়েছিল।

রাশিয়ার সেনা অভিযান শুরুর মাত্র একদিন পরেই ইউক্রেনীয় গণমাধ্যম প্রচার করতে শুরু করে যে তাদের একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের একজন বৈমনিক মাত্র ৩০ ঘণ্টার মধ্যে ছয়টি শত্রু বিমান ভূপাতিত করেছে।

তখন ‘ঘোস্টঅবকিইভ’ হ্যাশট্যাগ যুক্ত মিম এবং কাল্পনিক চিত্রগুলি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এবং লাখ লাখ বার দেখাও হয়।

এমনকি ইউক্রেইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেনকোও এই প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে একটি বৈমানিকের ছবি টুইট করে বলেন, ওই বৈমানিকই কিইভের ভুত এবং ‘রুশ বৈমানিকদের বিরুদ্ধে ছয়টি বিজয় অর্জন করেছে!’

কিন্তু তিনি যে ছবিটি পোস্ট করেছিলেন টুইটারে, শেষমেষ জানা গেল, সেটা ২০১৯ সালে ইউক্রেইনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা একটি ছবি।

ইউক্রেইনের সরকারও এই প্রচারে যুক্ত হয়েছিল। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি টুইটারে তারা একটি ছবি ও গল্প প্রচার করে যেখানে অচেনা ওই বৈমানিককে ‘রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলোর জন্য একটি দুঃস্বপ্ন’ হিসেবে অভিধা দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ওই বৈমানিকের প্রশংসা করে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয় যেখানে যুদ্ধ বিমানের সিমুলেটর থেকে ধারণ করা একটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করা হয়।

প্রায় একই সময়ে ফেইসবুকে ইউক্রেইনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যখন ঘোষণা করে যে বিমান বাহিনী থেকে অবসর নেওয়া অনেক বৈমানিক আবার বাহিনীতে যোগ দিচ্ছে, তখন তারা অচেনা ওই বৈমানিকের গল্পের প্রতি ইঙ্গিত করে লেখে, “কে জানে, হয়ত তাদেরই কেউ মিগ-২৯ নিয়ে ইউক্রেইনের আকাশে প্রতিরক্ষা দূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।”

মার্চের শুরুতে যখন ছড়ানো হয় যে ‘ঘোস্ট অব কিইভ’কে গুলি করে ভূপতিত করা হয়েছে, তখন সাবেক একজন ইউক্রেনীয় আইনপ্রণেতা প্রচার করেন, বৈমানিক বেঁচে গেছেন, তার ঘাঁটিতে ফিরেছেন এবং আরেকটি যুদ্ধ বিমান নিয়ে উড়েছেন ও আরেকটি শত্রু বিমানকে ঘায়েল করেছেন।

ফেইসবুকে তিনি লেখেন, ‘ভুত বেঁচে আছেন!’ কিইভ পোস্টের প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে ওই বৈমানিক ৪৯টি বিমান ধ্বংস করেছেন।

এসব গল্প নিয়ে কিছু অংশ থেকে সংশয় প্রকাশ করা হলেও এই গাঁথা বড় হতে থাকে। শিল্পীরা বৈমানিকের মুখশ্রী দিয়ে নন-ফানজিবল টোকেন বা এনএফটি তৈরি করেন। অনলাইনে নীল ও সোনালী ‘ঘোস্ট অব কিইভে’র ফ্লেয়ার ও চিত্র প্রচার পেতে থাকে।

গত শুক্রবার, বেশ কয়েকটি প্রকাশনা অচেনা ওই বৈমানিককে ১৩ মার্চ নিহত মেজর তারাবালকা হিসেবে চিহ্নিত করে, যিনি মরণোত্তর ‘হিরো অব ইউক্রেইন’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।

ইউক্রেইনীয়দের বরাতে টাইমস অব লন্ডন এও প্রচার করে যে ওই বৈমানিকের হেলমেট ও গগলস লন্ডনে নিলাম করা হবে।

পরের দিনই ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনীর এয়ার ফোর্স কমান্ড থেকে ‘ঘোস্ট অব কিইভ’ বা ‘কিইভের ভুত’ নিয়ে জল্পনার অবসান ঘটানো হল।

ফেইসবুক পোস্টে তারা লিখেছে, “হিরো অব ইউক্রেইন স্তেপান তারাবালকা ‘কিইভের ভুত’ নন এবং তিনি ৪০টি বিমান ধ্বংস করেননি।”

এমন বিবৃতি দিলেও এই ‘মিথ’ চলমান রাখতে কাজ করছে বিমান বাহিনী।

টুইটারে ইউক্রেইনের বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে “#ঘোস্টঅবকিইভ বেঁচে আছে। এটা ট্যাকটিক্যাল এভিয়েশন ব্রিগেডের উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন বৈমানিকদের চেতনাকে মূর্ত করেছে, যারা সফলভাবে #কিইভ ও এই অঞ্চলকে রক্ষা করে চলেছে।”

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here