‘তবু আমারে দেবো না ভুলিতে’

0

প্রতীক আকবর: তোমার শরীর নেশায় যখন/ঝিমাবে আকাশ কাঁদিবে পবণ

রোদন হইয়া আসিব তখন/তোমার বক্ষে দুলিতে

আমারে দেবো না ভুলিতে/আমি চিরতরে দূরে চলে যাব/তবু আমারে দেবো না ভুলিতে…

এমনই এক নাছোড়বান্দা ধরনের মানুষ ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। নানাভাবে তিনি আসবেন, উপলক্ষ তৈরি করবেন। সবাইকে নিজের কথা মনে করিয়ে দেবেন, যেন জোর করেই। এ কথা নিজেই লিখে গেছেন।

তার লেখার মতো সত্যি সত্যি এমনটাই ঘটছে প্রতিবছর। ২৭ আগস্ট তাকে মনে করতে হয়। এ দিনে নজরুল ছেড়েছেন পৃথিবীর মায়া। মৃত্যুর আগে যা দিয়ে গেছেন, তা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদে পরিণত হয়েছে।

কাজী নজরুল ইসলামকে অনেকে বলেন বাংলার সাহিত্যাকাশের ধুমকেতু। হঠাৎ উঠে আবার নিভে গেছে। তার জীবনটাও সে রকমই।

১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট মারা গেলেও কবি অসুস্থ হয়ে পড়েন ১৯৪২ সাল থেকেই। তিনি বাক্শ‌ক্তি হারিয়ে ফেলেন। একই বছরের শেষের দিকে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন কবি। সে হিসাবে ৪০-এরও কম বছরে তিনি সৃষ্টি করেছেন তার যাবতীয় সাহিত্যকর্ম।

যেখানে আছে গান, কবিতা, গল্প। আর তাতে রয়েছে বিদ্রোহ, সাম্য ও প্রেম।

প্রেমিক, সাম্যবাদী বা বিদ্রোহী- সবখানেই নজরুল অতুলনীয়।

যে হাতে তিনি লিখেছেন- মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী, দেব খোঁপায় তারার ফুল/কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির, চৈতী চাঁদের দুল/জ্যোছনার সাথে চন্দন দিয়ে, মাখাব তোমার গায়/রামধনু হতে লাল রং ছানি, আলতা পরাব পায়।

সেই হাতেই লেখা হয়েছে- ‘মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত/যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্‌গ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না/বিদ্রোহী রণক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত/ আমি চির বিদ্রোহী বীর/বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির।

আবার সাম্যের কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন, গাহি সাম্যের গান/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান/যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান/গাহি সাম্যের গান!

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। ২৭ আগস্ট তার ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) ঢাকায় পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই/ যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই।’ ১৯৭৬ সালের (১২ ভাদ্র ১৩৮৩) ২৯ আগস্ট কবির ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে দাফন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে।

নজরুলের জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১৯৭৬ সালে নজরুলকে দেয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব।

 

সূত্র: নিউজবাংলা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here