নিউ মার্কেটের ঘটনায় ‘তারা’ সুযোগ নিয়েছে: পুলিশ

0

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে নিউ মার্কেট এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মামলায় যে ২৪ জনের নাম এসেছে, তারা ঘটনার সুযোগ নিয়ে ‘উসকানি দিয়েছেন’ বলে পুলিশের ভাষ্য।

ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত কমিশনার শাহেনশাহ বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শতাধিক সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছে। এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থাও ভিডিও সংগ্রহ করে কাজ করছে।

“যেসব ভিডিও পাওয়া গেছে, সেখানেই অনেক কিছু বের হয়ে এসেছে- কে কে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে, আর কারা উসকানিদাতা হিসেবে কাজ করেছে।”

সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও জখম করার অভিযোগে ওই মামলায় যে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে; ১ নম্বরে আছে নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেনের নাম।

ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড নামের যে দুই দোকানের কর্মচারীদের দ্বন্দ্ব থেকে গত সোমবার রাতে সংঘর্ষের সূত্রপাত, সেই দোকান দুইটি সিটি করপোরেশন থেকে মকবুলের নামে বরাদ্দ হওয়া।

তবে কোনো দোকানই নিজে চালান না। রফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম নামে দুজনকে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন দোকান দুটি। রফিকুল ও শহিদুল আবার পরস্পরের আত্মীয়।

মকবুল হোসেনের দাবি, ‘বিএনপি করার কারণে’ পুলিশ তাকে এ মামলার আসামি বানিয়েছে।

মামলায় অন্য আসামিরা হলেন, আমীর হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারি, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহীদুল ইসলাম শহীদ, জাপানি ফারুক, মিজান ব্যাপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল। তারা ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পুলিশ কর্মকর্তা শাহেনশাহ বলেন, “তারা ঘটনার সুযোগ নিয়েছে। ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারা মাঠে ছিল, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।”

নিউ মার্কেট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবিরের দায়ের করা এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০০ থেকে ৩০০ জন ব্যবসায়ী ও কর্মচারী এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে।

দোকান মালিকরা বলছেন, সেদিন ইফতারের টেবিল সাজানো নিয়ে ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মীদের বচসার এক পর্যায়ে এক পক্ষ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মীকে ডেকে আনে।

তারা গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর ছাত্রাবাসে ফিরে আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মধ্যরাতে নিউ মার্কেটে হামলা চালাতে গেলে বাঁধে সংঘর্ষ।

সংঘর্ষের শুরুতে দোকানের সিসিক্যামেরার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশাল মিডিয়ায়। সেখানে তিনজন ছাত্রলীগ কর্মীর নাম বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে অতিরিক্ত কমিশনার শাহেনশাহ বলেন, “দুই পক্ষের অনেকেই চিহ্নিত হয়েছেন। তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পরে জানতে পারবেন।

হেলমেটধারী কারা

সোমবার মধ্যরাতে সংঘর্ষ শুরুর পর পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেয়। পরদিন সকালে আবার ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়, তাতে আহত হন অর্ধশতাধিক। পরে তাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়।

সংঘর্ষের সময় অনেকেকে হেলমেট মাথায় মারামারিতে জড়াতে দেখা যায়। লাঠিসোঁটার পাশাপাশি কারও কারও হাতে দেখা যায় ধারালো অস্ত্র। ওই হেলমেটধারীরা কারা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংবাদমাধ্যমে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে পুলিশ কর্মকর্তা শাহেনশাহ বলেন, “শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী দুই পক্ষেই সেদিন অনেকে হেলমেট পরে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এর কারণ দুটি, নিজেকে নিরাপদ রাখা, আর নিজের পরিচয় গোপন রাখা।”

তিনি বলেন, এই এলাকায় যাদের দোকান রয়েছে, তাদের অনেকের মোটরসাইকেল আছে, ফলে হেলমেট ব্যবহার করেন। আবার শিক্ষার্থীদের অনেকেরও মোটরসাইকেল আছেন, তাদের সঙ্গেও হেলমেট থাকে।

“সেদিন দুপক্ষের সংঘর্ষে ইট নিক্ষেপ বেশি হয়েছে। তাই দুপক্ষেই হেলমেট ব্যবহার বেশি হয়েছে।”

বাইরে থেকে কেউ হেলমেট পরে ঢুকে মারামারিতে জড়িয়েছিল কিনা- এ প্রশ্নে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, “আমিতো বলেছি যে, একটি পক্ষ সুযোগ নিয়েছে। তবে যেভাবে বলা হচ্ছে ‘হেলমেট বাহিনী’, বিষয়টি তা নয়, সাংবাদিকের মধ্যে অনেকেও তো হেলমেট পরেছেন নিজেকে….।

সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ দুই দিনে ৮৮টি টিয়ার গ্যাসের শেল এবং শটগানের ২১১ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here