পানি ব্যবহারে সংযমী হোন: প্রধানমন্ত্রী

0

নিজস্ব প্রতিবেদক: পানি ব্যবহারে সংযমী হতে দেশবাসীকে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

গত ২২ মার্চ ছিল বিশ্ব পানি দিবস। এবারের বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘গ্রাউন্ডওয়াটার-মেকিং দ্য ইনভিজিবল ভিজিবল’। এ উপলক্ষে আজ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে নগরীর গ্রিন রোডের পানি ভবনের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন। সেখানেই এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেশবাসীকে গৃহস্থালি, নির্মাণ বা সেচের মতো যেকোনো কাজে পানি ব্যবহারে সংযমী হওয়ার অনুরোধ করেন। কারণ, পানি পরিশোধনে সরকারকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়ন দর্শনের ক্ষেত্রে আমরা প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছি। পানিসম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদেরকে প্রকৃতিভিত্তিক কৌশল খুঁজে বের করতে হবে।’

যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বৃষ্টি ও বন্যার পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি জলাধার নির্মাণ—এই দুটি বিষয় মনে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং ভূগর্ভে জলাধার নির্মাণের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে।’

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সবাইকে খাল, বিল, হাওর ও বাঁওড়ের সঙ্গে নদীর সংযোগবিন্দুসমূহ খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, তা না হলে নদীর নাব্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বরোপ করেন।

শেখ হাসিনা নদী খননের সময় নাব্যতা সৃষ্টির পাশাপাশি অতিরিক্ত পানি কিংবা বন্যার পানি সংরক্ষণে বাফার জোন তৈরির ওপরও গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই পানি শীতকালে চাষাবাসে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বলেন, বন্যার সঙ্গে কীভাবে বাঁচতে হয়, সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয় সে সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। কারণ, বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ।

প্রধানমন্ত্রী সড়ক কিংবা বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়ার সময় গাছের চারা লাগানোর নির্দেশ দেন। তাঁর মতে, এ পদক্ষেপ ভূমিধস থেকে রক্ষায় সহায়ক হবে।

ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার ঘন ঘন ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। আর বাংলাদেশকে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। সে জন্য প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, সরকার ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে নদীর পানি বিশুদ্ধ করে জনগণের কাছে নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং সেচকাজে ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবহারসহ নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। তবে তিনি গৃহস্থালী, নির্মাণ কিংবা সেচসহ সব কাজে পানি ব্যবহারে কৃচ্ছ্রসাধনের অনুরোধ জানান।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশ কোনো ভূমিকা না রাখলেও বাংলাদেশের মতো কিছু ছোট দেশকে এর ব্যাপক খেসারত দিতে হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ রক্ষায় আমাদের নিজেদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে।’

প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সরকার ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ গ্রহণ করেছে, যেখানে এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নিরাপদ ও উন্নত জীবন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এর বাস্তবায়নও শুরু করেছেন।

অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বক্তব্য দেন এবং মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবীর বিন আনোয়ার স্বাগত বক্তব্য দেন।

প্রসঙ্গত, বিশুদ্ধ পানির গুরুত্বের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত এবং বিশুদ্ধ পানিসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার সুপারিশের লক্ষ্যে প্রতিবছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয়।

জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্মেলনের (ইউএনসিইডি) সুপারিশের সঙ্গে সংগতি রেখে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ২২ মার্চ ওয়ার্ল্ড ডে ফর ওয়াটার ঘোষণা করা হয়, যা ১৯৯৩ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে।

সূত্র: প্রথম আলো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here