বংশগত উচ্চ রক্তচাপ সামাল দিতে খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিন

0

লাইফস্টাইল ডেস্ক: উচ্চ রক্তচাপ যদি বংশগত সমস্যা হয় তবে একদিক থেকে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে পারেন।

আপনার জন্য এটা একটা নিশ্চিত সতর্কবাণী। যা থেকে বুঝতে হবে রক্তচাপ নিয়ে আপনাকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতেই হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিক বলছে, “উচ্চ রক্তচাপ মানুষকে নীরবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে থাকে। যাদের এই সমস্যা আছে তাদের কোনো উল্লেখযোগ্য উপসর্গ থাকে না। এমনকি রক্তচাপ পরীক্ষা করে যখন দেখা যায় যে তা মারাত্মক পর্যায়ে বেশি তখনও তাদের চোখে পড়ার মতো উপসর্গ দেখা যায় না। তাই বংশে কারও যদি এই সমস্যা থাকে তবে আপনারও এই রোগ থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি।”

এখানে শুধুই যে জিনগত বৈশিষ্ট্য দায়ী তা নয়। পরিবারের সদস্যদের খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চার মাত্রা, জীবনযাত্রা ইত্যাদি প্রায় একই রকম হয়। অর্থাৎ যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের খাদ্যাভ্যাস থেকেই শিক্ষা নিতে পারেন বর্জণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে।

খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য রক্ষা

বয়স আর জিনগত বৈশিষ্ট্য আপনি বদলাতে পারবেন না, বদলাতে পারবেন শুধুই নিজের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ের উদ্ধৃতি দিয়ে ইটদিস ডটকম’য়ের প্রতিবেদনে প্রকাশ, “জীবনযাত্রার স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা অত্যন্ত শক্তিশালী ও কার্যকর উপায় এই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাকে দমানোর ক্ষেত্রে। ২০ লাখ মানুষের ওপর করা ৩১৪টি গবেষণার তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কারও হৃদরোগের ইতিহাস ছিল না। আর তাদেরকে নম্বর দেওয়া হয়েছে ‘বডি ম্যাস ইনডেক্স’, খাদ্যাভ্যাস, অলস জীবনযাত্রা, মদ্যপানের মাত্রা, ধূপমান ইত্যাদির ভিত্তিতে।”

“এদের মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায়, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা যারা মেনে চলেন তাদের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত সম্ভাবনা কমে যায় প্রায় ৩১ শতাংশ,। এমনকি তাদের বংশগত সমস্যা থাকলেও। এ থেকে বোঝা যায় জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা কতটা গুরুত্বপুর্ণ ও কার্যকর।

ফাস্ট ফুড নয়, তাজা খাবার খেতে হবে

খাদ্যাভ্যাস থেকে ফাস্ট ফুড যত কমাবেন ততই লবণ খাওয়া কম হবে, কমবে সোডিয়ামের মাত্রা।

রক্তচাপের ওপর সোডিয়ামের প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক। কারণ লবণ বেশি খেলে শরীরে পানি বাড়ে, আর সেই বাড়তি পানি অপসারণ করতে গিয়ে যকৃতের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। শরীরের জমে যাওয়া সেই অতিরিক্ত পানিই পক্ষান্তরে রক্তচাপ বাড়ায়।

‘দ্য ২০২০-২০২৫ ডায়েটারি গাইডলাইনস ফর আমেরিকান’ অনুযায়ী, ‘দিনে সর্বোচ্চ ২,৩০০ মি.লি. গ্রাম সোডিয়াম গ্রহণ করা যাবে।

শুধু খাবারে স্বাদ আনতে গিয়েই এতটা লবণ খাওয়া হয়ে যায়। তাই বাড়তি কাঁচা লবণ খাওয়া বাদ দিতে হবে।

আর ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত, কৌটাজাত, হিমায়িত খাবারে প্রচুর লবণ দেওয়া হয় সংরক্ষণের জন্য। তাই এগুলো বেশি খেলে স্বভাবতই লবণ খাওয়ার মাত্রা বেড়ে যাবে।

স্যাচুরেইটেড ফ্যাট

এই ধরনের চর্বি খাওয়ার মাত্রা কমাতে হবে সবারই। তবে যাদের বংশে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তাটা বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের সনদস্বীকৃত পুষ্টিবিদ রেবেকা শিলিং ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “একবেলায় মাংস খাওয়ার পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ তিন আউন্স। যা প্রায় হাতের তালুর সমান মাংস। সেখানে চর্বি থাকলে সেগুলো কাঁচা অবস্থাতেই ফেলে দিতে হবে। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে বেছে নিতে হবে ‘লো-ফ্যাট’। বাদাম, সবজি ও ভোজ্য আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাত্রা বাড়াতে হবে অনেক বেশি।”

তিনি আরও বলেন, “যেসব খাবারে ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ বেশি সেগুলো ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এলডিএল’য়ের মাত্রা বাড়ায়। এতে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হয়, রক্তনালী আটকে যায়, সব মিলিয়ে বাড়ে রক্তচাপ।”

প্রক্রিয়াজাত মাংস বাদ

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলনেস ভার্জ’য়ের সনদস্বীকৃত পুষ্টিবিদ মেলিসা মিত্রি বলেন, “সসেজ, বেকন ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত মাংসতে স্বাভাবিকের চাইতে বেশি ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ থাকে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ দিন ভালো রাখার জন্য তাতে যোগ করা হয় প্রচুর লবণ ও অন্যান্য প্রিজারভেটিভ। প্রতিটি উপাদানই হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই এগুলো যতটা কম খাবেন ততই সুস্থ থাকতে পারবেন।”

‘আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফল বলে, যেসব নারী সপ্তাহে পাঁচ বার বা তারও বেশি প্রক্রিয়াজাত মাংস খান তাদের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ১৭ শতাংশ বেশি।”

পটাশিয়াম বাড়াতে হবে

রক্তনালীর দেয়ালে চাপ কমায় পটাশিয়াম। ফলে কমে রক্তচাপ- বলছে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন।

প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে যকৃতকে সাহায্য করে এই খনিজ উপাদান। তাই খাদ্যাভ্যাসে পটাশিয়ামের আধিক্য উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

আর পটাশিয়ামের আদর্শ উৎস হল কলা, ডাল, সিম, ব্রকলি, বাদাম ইত্যাদি ফল ও সবজি।

ওজন বাড়ানোর খাবার বাদ

প্যাকেটজাত চিপস, ‘কুকিজ’, ‘পেস্ট্রি’ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, চিনি, স্যাচুরেইটেড ফ্যাট থাকে। সবগুলোই হৃদরোগসহ অন্যান্য দূরারোগ্য ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ায়।

মিত্রি বলেন, “অস্বাস্থ্যকর এই খাবারগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়াতে বারবার খেতে ইচ্ছা করে। ফলে ওজন বাড়তে থাকে। বাড়তি ওজন বা স্থূলতা উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ। পানীয়র মধ্যে এই তালিকায় থাকবে ‘কার্বোনেইটেড’ বা কোমল পানীয়।

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here