বিমানবালাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার মাস্কের

0

প্রযুক্তি ডেস্ক: এক বিমানবালাকে ‘যৌন হয়রানির’ অভিযোগ উঠেছে আলোচিত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে; ওই ঘটনা চেপে যেতে স্পেসএক্স ভুক্তভোগী ওই নারীকে আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বলে খবর ছেপেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার।

তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করে মাস্ক অভিযোগকারীকে বলেছেন ‘মিথ্যাবাদী’।

ইনসাইডারের দাবি, আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের বদলে মাস্ক এবং তার দুই প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স ও টেসলা নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ না করার এবং যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘চুক্তি’ করতে হয়েছিল ওই বিমানবালাকে।

তিনি নিজে কথা না বললেও তার এক বন্ধু এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। আর নথিপত্র ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্বেষণ করে আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ইনসাইডার ‘নিশ্চিত হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে তাদের প্রতিবেদনে।

ভুক্তভোগীর বন্ধুর বরাত দিয়ে ইনসাইডার লিখেছে, মাস্কের গালফস্ট্রিম জি৬৫০ইআর বিমান ক্রুদের একজন ছিলেন ওই নারী। মাস্ক প্রায়শই তাকে প্রাইভেট কেবিনে ডেকে ‘শরীর মাসাজ করে দিতে’ বলতেন। এমনকি স্পেসএক্সও ওই কর্মীকে মাসাজ করার বৈধ লাইসেন্স নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

ইনসাইডার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই বিমানবালা তার বন্ধুকে বলেছেন, এক ফ্লাইটে মাসাজ নেওয়ার সময় ‘দেহের নিচের অংশের আবরণ সরিয়ে ফেলেন’ মাস্ক এবং ‘মালিশের চেয়ে বেশি’ কিছু করলে একটি ঘোড়া কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ব্যক্তিগত জীবনে ঘোড়ায় চড়তে পছন্দ করেন ওই বিমানবালা এবং বিষয়টি জানতেন মাস্ক।

ভুক্তভোগীর বন্ধু ইনসাইডারকে বলেছেন, ইলন মাস্ক ও স্পেসএক্সের সঙ্গে আপস চুক্তি করার সময় বিমানবালার আইনজীবী ওই বন্ধুর কাছ থেকেও লিখিত বক্তব্য নিয়েছিলেন।

বিমানবালার বন্ধু আরও বলেছেন, মাস্কের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর কর্মক্ষেত্রে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়েন ওই বিমানবালা। ওই ঘটনার পর থেকে তাকে শিফট দেওয়া কমিয়ে দেয় স্পেসএক্স। এক পর্যায়ে ওই নারী নিশ্চিত হন যে মাস্ককে প্রত্যাখ্যান করার ফলে তার কাজের সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালে স্পেসএক্সের মানবসম্পদ বিভাগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেন ওই বিমানবালা। স্পেসএক্স কোনো আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে শুরুতেই মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে অভিযোগ মীমাংসা করার চেষ্টা করে।

আড়াই লাখ ডলারের মীমাংসা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় মাস্ক নিজেও উপস্থিত ছিলেন বলে বিজনেস ইনসাইডারের দাবি। চুক্তির শর্ত ছিল, আড়াই লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের বদলে মাস্ক বা তার মালিকানাধীন স্পেসএক্স বা টেসলা প্রসঙ্গে মুখ খুলতে পারবেন না ভুক্তভোগী, যৌন হয়রানির অভিযোগে কোনো মামলাও করতে পারবেন না। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া অর্থ নিয়েও মুখ খোলার সুযোগ থাকবে না ওই নারীর।

বিজনেস ইনসাইডার লিখেছে, বিমানবালার বন্ধু তাদের সঙ্গে যোগাযোগের আগে ওই নারীর কাছ থেকে অনুমতি নেননি, কারণ তিনি মনে করেছেন, এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে আনা উচিত আর সেই বিমানবালা চুক্তিতে আটকা থাকলেও তার ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মাস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিজনেস ইনসাইডার। মাস্ক ইমেইলে বলেছেন, এর উত্তর দিতে তার আরও সময় প্রয়োজন এবং এ গল্পে ‘আরও অনেক কিছু আছে’। তবে তার দাবি, এ অভিযোগ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।

ওই বিমানবালার সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে মন্তব্য করতে পরে আরও সময় দিলেও মাস্ক আর যোগাযোগ করেননি বলে বিজনেস ইনসাইডারের ভাষ্য।

তবে মাস্ক টুইট করে বলেছেন, “আমি ওই মিথ্যাবাদীকে চ্যালেঞ্জ করছি, যে দাবি করেছে তার বন্ধু আমাকে নাঙ্গা দেখেছে। কী দেখেছে সে (দাগ বা ট্যাটু), শুধু একটা বর্ণনা দিক, যেটা সাধারণ মানুষ জানে না। সেটা সে করতে পারবে না, কারণ ওরকম কিছু কখনও ঘটেনি।”

আরেক টুইটে মাস্ক বলেছেন, সামনের মাসগুলোতে তার ওপর রাজনৈতিক আক্রমণ ‘লক্ষ্যণীয় হারে বাড়বে’ বলে তার ধারণা।

অন্যদিকে, বিজনেস ইনসাইডারের সম্পাদকদের একজন জন কুক টুইট করে লিখেছেন, তার সংবাদমাধ্যম যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে মাস্কের মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করার পরপরই ওই ‘রাজনৈতিক আক্রমণের’ টুইট করেছেন মাস্ক।

প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ লিখেছে, টুইটারের ঘটনা প্রবাহ থেকে ইঙ্গিত মিলছে, সম্ভবত ইনসাইডারের প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই পাঠকদের দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করছিলেন মাস্ক।

বিজনেস ইনসাইডার লিখেছে, মাস্কের মালিকানাধীন দুই কোম্পানি টেসলা ও স্পেসএক্সে যৌন হয়রানির ঘটনা নিয়ে আগেও অভিযোগ তুলেছিলেন কর্মীরা।

স্পেসএক্সের এক কর্মী অভিযোগ করেছেন, এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলার পরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কোম্পানি।

আর মানবসম্পদ বিভাগের ব্যর্থতা নিয়ে একাধিক মামলা লড়ছে টেসলা। যৌন হয়রানি ও জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ায় এমন আচরণের মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ আছে টেসলার মানবসম্পদ বিভাগের বিরুদ্ধে।

এদিকে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইলন মাস্ক খবরের শিরোনামের আসার পেছনে যোগ হল আরেকটি কারণ। মাইক্রোব্লগিং সেবা টুইটার নিয়ে নানা নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে প্রায় মাসখানেক ধরে খবরের শিরোনাম দখল করে রেখেছেন ইলন মাস্ক।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় হলিউড তারকা অ্যাম্বার হার্ডের বিরুদ্ধে তার সাবেক স্বামী জনি ডেপের করা মানহানি মামলার শুনানিতেও একাধিকবার নাম এসেছে মাস্কের। হার্ড বিচ্ছেদের আগেই মাস্কের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here