বিমান ছিনতাই: পিস্তলটি ‘বাংলাদেশে তৈরি প্লাস্টিকের খেলনা’

0

মো. আশরাফুল ইসলাম: চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় কমান্ডো অভিযানে নিহত পলাশ আহমেদের কাছ থেকে উদ্ধার করা পিস্তলটি বাংলাদেশে তৈরি প্লাস্টিকের একটি খেলনা বলে প্রতিবেদন দিয়েছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।

এই বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আকতার বুধবার বলেন, “বাহ্যিক দৃষ্টিতে অরজিনাল পিস্তলের মত দেখালেও বাস্তবে এটি খেলনা। পিস্তলটির ম্যাগজিন আলাদা করা যায়। ভেতরে গুলির মত করে ছোট ছোট প্লাস্টিকের দানা রাখা যায়। অল্প শব্দও হয়। পুরোটাই খেলনা।”

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ গত ৭ মার্চ তাদের ব্যালিস্টিক পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়ার পর মঙ্গলবার তা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিটই বিমান ছিনতাইয়ের ওই ঘটনার তদন্ত করছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া বলেন, “ব্যালিস্টিক রিপোর্ট আমরা গত রাতে হাতে পেয়েছি।সেখানে বলা হয়েছে এটি একটি খেলনা পিস্তল। সেখানে বারুদ ব্যবহার বা গুলি করার কোনো সুযোগ নেই।”

খেলনা ওই পিস্তলের গায়ে ইংরেজিতে লেখা ছিল- ‘গান সিরিজ ওসাকা, আমান ইন্ডাস্ট্রিজ, মেইড ইন বাংলাদেশ’।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে ১৪৮ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজ। চট্টগ্রাম হয়ে রাতেই দুবাই পৌঁছানোর কথা ছিল উড়োজাহাজটির।

কিন্তু নির্ধারিত যাত্রাবিরতিতে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই ফ্লাইট বিজি-১৪৭ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ জানায়, অস্ত্রধারী এক যুবক বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে।

প্রায় দুই ঘণ্টা টান টান উত্তেজনার পর কমান্ডো অভিযানে সংকটের অবসান ঘটে। সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, পিস্তলধারী ওই যুবক নিহত হয়েছেন। আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে পরদিন র‌্যাব জানায়, ওই যুবকের নাম পলাশ আহমেদ, বাড়ি নারায়ণগঞ্জে।

ওই বিমানের দুই যাত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ছিনতাইকারী পিস্তল উঁচিয়ে যাত্রীদের হুমকি দিচ্ছিলেন। গুলির শব্দও তারা শুনেছেন। তবে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মাহবুবার রহমান সেই রাতেই বলেছিলেন, পিস্তলটি ছিল খেলনা।

পরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, “একজন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী (পলাশ) বিমানের মাঝখান দিয়ে দৌড় দিয়ে সামনের ককপিটে ঢোকার চেষ্টা করে। তার হাতে বোমা ও অস্ত্র সদৃশ বস্ত দেখা যায়।

“উক্ত দুষ্কৃতকারী তার কিছু দাবি-দাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে শুনতে হবে বলে চিৎকার করে। অন্যথায় সে বিমানটি তার কাছে থাকা বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করে দেবে মর্মে হুমকি দেয়।

“উক্ত দুষ্কৃতকারী ওই সময় ২টি ফটকা (পটকা) জাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটায়।”

নিহত পলাশ চিত্রনায়িকা শিমলার স্বামী ছিলেন, সাড়ে ৩ মাস আগে শিমলা তাকে তালাক দেন।

এজাহারে আসামিদের অপরাধের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, “পলাশ আহমেদ বিমানের পাইলট, কেবিন ক্রু ও যাত্রীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদের হুমকি দিয়া জিম্মি করত আতঙ্ক সৃষ্টি করিয়া বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here