মুসা ‘স্বীকার করেছেন’, দাবি পুলিশের

0

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: ওমান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা সুমন শিকদার মুসা মতিঝিলের সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত থাকার কথা ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন’ বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “প্রাথমিকভাবে তিনি এই হতাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাকে আজ আদালতে হাজির করে ১৫ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাওয়া হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে মুসা ছাড়াও আর ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা কারাগারে রয়েছে।

“তাদের রিমান্ডে এনে আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসা করে আরও তথ্য চাওয়া হবে। তখনই নিশ্চিত হওয়া যাবে এই হত্যাকাণ্ডটি কার নির্দেশে হয়েছে এবং আর কারা জড়িত।”

টিপু হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন মুসা ওমানে ইন্টারপোলের হাতে গ্রেপ্তার হলে বৃহস্পতিবার তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ঢাকায় নামার পর তাকে নেওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে।

গত ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাজাহানপুরে যানজটে আটকে পড়া গাড়িতে এলোপাথাড়ি গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু।

মোটর সাইকেলে আসা এক ব্যক্তি টিপুর গাড়ির কাছে এসে গুলি করেন। ওই সময় টিপুর গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি গুলিতে নিহত হন। টিপুর গাড়িচালক মুন্নাও গুলিবিদ্ধ হন।

ওই ঘটনার পর দুবাই থেকে ওমানে চলে যান মুসা। এ মামলার তদন্তে মুসার নাম আসার পর তাকে ধরতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশের পুলিশ। এরপর গত ১২ মে ওমানে গ্রেপ্তার হলেও বাংলাদেশে বিষয়টি জানাজানি হয় ৩ জুন।

হত্যাকাণ্ডের পর টিপুর স্ত্রী স্থানীয় নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি যে মামলা করেছেন, তাতে আসামির তালিকায় কারও নাম উল্লেখ করা ছিল না।

পরে ২৬ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই ব্যক্তিই টিপুকে গুলি করেন। পরে আরফান উল্লাহ দামাল নামে আরও একজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয় কমলাপুর থেকে।

এরপর ২ এপ্রিল মুসার ভাই সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, মতিঝিল থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় র‌্যাব।

র‌্যাব সে সময় বলেছিল, চাঁদাবাজি ও দরপত্র নিয়ে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব, রিয়াজুল হক মিল্কী হত্যার বদলা এবং বোঁচা বাবু হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ওমর ফারুকসহ স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। বাজেট ছিল ১৫ লাখ টাকা।

তদন্তকারীদের ভাষ্য, মুসা ‘রাজনীতি ও অপরাধজগতের মধ্যে যোগসূত্র’ হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ঢাকা ও দুবাইয়ের অপরাধজগতের মধ্যেও সংযোগের সমন্বয় করতেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন আগেই মুসা দুবাই চলে যান। হত্যা পরিকল্পনা এবং যাবতীয় নির্দেশনা সেখান থেকেই দেওয়া হয়। কিলিং মিশন শেষ হওয়ার বার্তাও দুবাইতে পৌঁছে যায়।

এরপর মুসা দুবাই থেকে ওমানে গেছেন বলে গত মাসেই সংবাদপত্রে খবর আসে। পুলিশ সদরদপ্তরও মুসার দুবাই থেকে ওমান যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে।

পরে মুসাকে ধরার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। একপর্যায়ে মুসা গ্রেপ্তার হলে তাকে আনতে তিন সদস্যের পুলিশের একটি দল ৫ জুন ওমানে যান। সেখান থেকে ৯ জুন তাকে নিয়ে দেশে ফেরেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here