শিরিন: জীবন দিয়ে কেনা নাম- ‘সাংবাদিক’

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শিরিন আবু আকলেহ আরবের ঘরে ঘরে পরিচিত এক নাম, আক্ষরিক অর্থেই। যুদ্ধ কিংবা শান্তি, যে কোনো সময়ই অঞ্চলের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন তিনি। দেশের ভেতরে কিংবা এর গণ্ডি ছাড়িয়ে তার শান্ত অথচ সদর্প উপস্থিতি বসার ঘর থেকে শুরু করে যুদ্ধশিবির, সবখানই মুখর করে রাখত।

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনিদের নানা বিষয় এবং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে আসছিলেন এই নারী। কাজের মধ্যেই গত ১১মে পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ৫১ বছর বয়সী এই সাংবাদিক।

ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভুত আল-জাজিরার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শিরিন কীভাবে ওই অঞ্চলে সাংবাদিকতায় ইতিহাস হয়ে উঠলেন, তা বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি।

শুরুটা ১৯৯৭ সালে, আরবি টেলিভিশন আল-জাজিরা শুরুর পরের বছর থেকেই নিজের ইতিহাস নিজেই তৈরি করেছিলেন সাংবাদিক শিরিন।

আরব নারীদের একটি প্রজন্মের কাছে সাংবাদিকতার চালিকাশক্তি ছিলেন শিরিন। তিনিই প্রথম নারী সংবাদকর্মী, যাকে তারা টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছেন, তাকে ‘আইকন’ মেনে নিজেদের তার আদলে তৈরির কথা ভেবেছেন বহু মানুষ।

গত ১১ মে ঘটনার দিন অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শিরিন, পরনের পোশাকে ‘প্রেস’ লেখাও ছিল, হঠাৎ একটি গুলি এসে তার গায়ে লাগে। শিরিন মারা যান। আল-জাজিরার পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এটা ইসরায়েলি বাহিনীর ‘ঠাণ্ডা মাথায় খুন’।

ঘটনার পর শোক, ক্ষোভ-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিরিনকে আপনজন ভাবা ফিলিস্তিনিরা। সোশাল মিডিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন শিরোনাম-, ‘ট্রেইলব্লেজার, প্রতীক, শহীদ’।

ফিলিস্তিনিরা শিরিনকে আপন মানুষ ভাবত, তারা মনে করত, তিনি ‘তাদের কথা জানে, তাদের কথা বলে’।

পশ্চিম তীরের রামাল্লায় তার ছবি নিয়ে টানান হয়েছে বিশাল বিলবোর্ড। মোমবাতি জ্বালিয়ে তাকে স্মরণ করছেন অনেকে।

তবে সব ছাপিয়ে শিরিন একটি শিরোনাম অর্জন করেছেন কাজ এবং জীবন দিয়ে, সেটি হল ‘সাংবাদিক’।

শিরিনের এক সহকর্মী লিনা আর শাফিন জানান, মৃত্যুর খবরটি তিনি প্রথম জেনেছিলেন তার আরেক সহকর্মী শায়মা খলিলের টুইটে।

‘ওহ! কী সাংঘাতিক খবর! আমি এবং লাখো মানুষ বছরের পর বছর ধরে শিরিনের খবর দেখে আসছি,” বলেন লিনা।

তিনি বলেন, “এই অঞ্চলের বহু নারী আয়নার সামনে চুলের ব্রাশ ধরে (মাইক্রোফোন ভেবে নিয়ে) নিজেকে শিরিন ভেবে বড় হয়েছেন।”

লিনার ভাষ্যে, শিরিন ইসরায়েলিদের মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা তৈরি করতে পেরেছিলেন।

১৯৯৩ সালে আরব বিশ্বে অসল চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে শিরিন ছিলেন যুদ্ধ এবং শান্তির কণ্ঠস্বর। ফিলিস্তিনিরা মনে করতেন, এই সাংবাদিক তাদেরই অংশ।

শিরিনের আত্মবিশ্বাস এবং হাসিমুখ তাকে সবার থেকে তাকে আলাদা করত বলে মনে করেন অনেক ফিলিস্তিনি।

বিশেষ করে ২০০০ সালে মুক্তির আন্দোলনের সময় পশ্চিম তীরের প্রধান শহরগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনীর বড় ধরনের হামালার সংবাদ প্রকাশের জন্য অনেক ফিলিস্তিনি শিরিনকে স্মরণ করেন গভীরভাবে।

সেই উত্তরের শহরেই ইসরায়েলি অভিযানের খবর সংগ্রহে গিয়ে প্রাণ হারিয়ে শিরিন এখন সবচেয়ে বড় খবর হয়েছেন। যে মৃত্য ফিলিস্তিন, আরব বিশ্ব ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে, ঢেকেছে শোকের ছায়ায়।

শিরিনের মরদেহের কাঠের কফিনটিতে গাঢ় সাদা অক্ষরে ‘প্রেস’ লেখা নীল দেহের বর্মটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এবং অন্যান্য যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করা সাংবাদিকদের শক্তি এবং বেদনার স্মারক বলে মনে করছেন তার সহকর্মীরা।

আরব সাংবাদিক এবং লেখক মারওয়ান বিশারা লিখেছেন, ভয়াবহ পরিস্থিতি, এমনকি রক্তাক্ত স্থানেও যখন থাকতেন শিরিন, তখনও শান্ত ও ধীরস্থির থাকতেন।

এখন শিরিন নেই এই ধরনের অনেক খবর হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন অনেকে।

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here