সন্তানদের জন্য জাপানি মা ও বাংলাদেশি বাবাকে ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধানে’ আসার সুযোগ

0

আদালত প্রতিবেদক: দুই শিশু সন্তানের অভিভাবকত্ব ও জিম্মা নিয়ে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধানে আসতে শিশুদের মা-বাবাকে আবারও সুযোগ দিয়েছে হাই কোর্ট।

শিশুদের মা জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো, বাবা ইমরান শরীফ বালাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

দুই শিশুর অভিভাবকত্ব চেয়ে মা নাকানো এরিকোর রিট আবেদনটির শুনানি আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর অবধি মুলতবি রেখে এ সময়ের মধ্যে তাদের সমাধানে আসতে বলা হয়েছে।

আর যে ফ্ল্যাটে শিশুরা আছে, সে ফ্ল্যাটেই শিশুদের নিয়ে মা-বাবাকে থাকতে বলা হয়েছে।

তবে শিশুদের সঙ্গে যেদিন মা থাকবেন, সেদিন বাবা থাকতে পারবেন না। আবার বাবা যেদিন থাকবেন, সেদিন মা থাকতে পারবেন না।

এই প্রক্রিয়ায় প্রথম দিন শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা নাগাদ দুই শিশুর সঙ্গে মা নাকানো এরিকো থাকবেন।

শনিবার সকাল ৮টা থেকে পরদিন রোববার সকাল ৮টা অবধি থাকবেন বাবা ইমরান শরীফ।

এভাবে ২৮ সেপ্টেম্বর অবধি একদিন পর পর পালা করে থাকতে হবে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা নাকানো এরিকো ও ইমরান শরীফকে।

আর সমান হারে ফ্ল্যাটের ভাড়া পরিশোধ করার জন্য ইমরান শরীফের আইনজীবীকে নাকানো এরিকোর কাছে ব্যাংক হিসাব সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

আদেশের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার মামলাটি উঠলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আদালতে এরিকোর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও মোস্তাফিজুর রহমান খান।

আদেশের সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক ইনায়েতুর রহিম উভয় পক্ষের আইনজীবীকে বলেন, “আমরা ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করলাম। আশা করি, এর মধ্যে আপনারা একটি ভালো সমাধান করবেন।”

আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, “আপনার ওপর আমরা খুব আশাবাদী যে, আপনি বিষয়টা সেটেল করবেন। আপনি তো দেশ-বিদেশ সবটাই ভালো জানেন। আশা করি, আপনি এখানে একজন মুরুব্বির দায়িত্ব পালন করবেন।”

দুই শিশুর অভিভাবকত্ব চেয়ে মা নাকানো এরিকো রিট আবেদন করলে গত ১৮ আগস্ট এক আদেশে হাই কোর্ট দুই শিশুকে হাজির করতে বলে।

ইমরান শরীফইমরান শরীফশিশুদের বাবা ইমরান শরীফ ও তার বোন আমিনা জেবিনকে (শিশুদের ফুপু) ওই নির্দেশ দেওয়া হয়। ইমরান শরীফ যাতে দুই মেয়েকে নিয়ে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য তাদের দেশত্যগে নিষেধাজ্ঞাও দেয় আদালত।
এর মধ্যে গত ২২ অগাস্ট দুই শিশুকে ইমরান শরীফের বারিধারার বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারপর থেকে তারা মহানগর পুলিশের সাপোর্ট সেন্টারে ছিল।

সেখান থেকেই গত ৩১ অগাস্ট দুই শিশুকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।

উন্নত পারিবারিক পরিবেশে শিশুদের রাখতে তাদের মা এরিকো ও বাবা ইমরানের আবেদনের পর সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ওইদিন আদেশ দেয় আদালত।

সে আদেশে ইমরান শরীফের ঠিক করা গুলশানের একটি ফ্ল্যটে দুই শিশুকে নিয়ে আপাতত ১৫ দিন একসাথে থাকতে বলা হয় তাদের।

ঢাকা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালককে বলা হয়েছিল বিষয়টি দেখভাল করতে। আর ঢাকা মহানগর পুলিশ এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) বলা হয়েছিল শিশু ও মা-বাবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

কিন্তু সাত দিনের মাথায় গত ৩০ আগস্ট সে আদেশ পরিমার্জন (মোডিফিকেশন) চেয়ে আদালতে আবেদন করেন নাকানো এরিকোর আইনজীবী।

৩১ অগাস্ট সে আবেদনের শুনানির পর হাই কোর্ট সন্তানদের সঙ্গে মা-বাবার থাকা এবং তাদের সময় কাটানোর বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে দেয়।

আদালত বলে দেয়, ৯, ১১, ১৩ ও ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে ওই বাসায় মেয়েদের সঙ্গে মা থাকবেন, বাবা থাকবেন না। বাকি সময়টা বাবা-মা দুজনেই শিশুদের সঙ্গে থাকতে পারবেন।

তাছাড়া মা-বাবা চাইলে বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে যেতে পরবেন। কেনাকাটা করতে পারবেন, বাইরে খেতে যেতে পারবেন।

পরদিন অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে ইমরান শরীফ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করলেও চেম্বার বিচারপতি সেদিন হাই কোর্টের আদেশে হস্তক্ষেপ করেননি।

তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার মামলাটি আদালতে উঠলে দুই পক্ষই সম্পূরক আবেদন নিয়ে দাখিল করে।

মা নাকানো এরিকোর আবেদনে একটি আরজি ছিল শিশুদের সঙ্গে মা-বাবার থাকা বা সময় কাটানোর সময়, দিনক্ষণ আলাদা করে দেওয়া। যদিও এতে আপত্তি তুলেছিলেন শিশুদের বাবা ইমরান শরীফের আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ।

কিন্তু আদালত সে আপত্তিতে কর্ণপাত না করে অদেশ দেয়।

এ বিষয়ে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, “আমরা তো চেয়েছিলাম একটা পারস্পরিক বোঝাপড়া হোক। তারপরেও যেহেতু হচ্ছে না, তাই আমরা পর্ায়ক্রমে থাকার আদেশ দিলাম।”

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here