স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য বাস চালুর আহ্বান মেয়র আতিকের

0

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার যানজট কমাতে শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতে প্রাইভেট কারের বদলে বাস চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর পূর্তিতে শনিবার ‘মিট দ্যা প্রেস’ এ তিনি এ আহ্বান জানান।

আতিকুল ইসলাম বলেন, “ঢাকার প্রাইভেট স্কুল-কলেজের জন্য বাস চালু করতে হবে। বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে আমরা লক্ষ্য করেছি, স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে প্রাইভেট কারে একটা প্রতিযোগিতা চলে। বাচ্চারা বলাবলি করে, কার কী ‘কার’ আছে। এই প্রতিযোগিতার অবসান হবে। যার ফলে যানজট অনেকাংশেই কমে যাবে।

“আপনারা খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, স্কুল-কলেজের আশপাশের এলাকায় প্রাইভেট কারের জন্য যানজট লেগে থাকে। স্কুল বাস চালু করলে এই যানজটটুকু থাকবে না। আর স্কুল-কলেজ বাস চালু করলে আমি কথা বলে তাদের জন্য এই বাসগুলোর ট্যাক্স কমিয়ে দেব। তবুও আপনারা স্কুল বাস চালু করুন।”

শিশুদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাগে ডিভাইস দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেকের মধ্যে একটা টেনশন থাকে বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়ে। বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য কার বাচ্চা কোথায় আছে সেটা যেন বাসায় বসে মোবাইলে দেখতে পারে, সেজন্য চিপ/ডিভাইস প্রত্যেক বাচ্চাদের ব্যাগে লাগিয়ে দেওয়া হবে। তাহলে অভিভাবকরা মোবাইলে দেখতে পাবে বাচ্চা কোথায় আছে।”

‘সেতু ভবন কেন ভাঙা যাবে না’

হাতিরঝিলের জন্য কারওয়ান বাজারে বিজিএমই ভবন ভাঙতে পারলে মহাখালীতে সেতু ভবন ও সড়ক ভবন কেন ভাঙা যাবে না, সেই প্রশ্নও তোলেন মেয়র আতিক।

তিনি বলেন, “বনানী থেকে শুরু করে উত্তরা পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে এই সেতু ভবন আর বিআরটিএ ভবনের জন্য, রাস্তার উপরে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে এই ভবন দুটি করা হয়েছে। এখানে আগে অনেক গাছ ছিল সব কেটে করা হয়েছে সেতু ভবন আর বিআরটিএ ভবন। আমি আহ্বান জানাব- এই ভবন যেন ভেঙে ফেলা হয়।”

ঢাকার সড়কে ‘চোর-পুলিশ খেলা’ হচ্ছে মন্তব্য করে আতিক বলেন, “রাস্তার উপরে কোনো আইটেম রাখা যাবে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার উপরে বিভিন্ন ধরনের আইটেম রাখা হয়, এমনকি দোকানপাটও করা হয়। বলতে গেলে একজন বলে এটা পুলিশের, পুলিশ বলে এটা কাউন্সিলরের, আবার আরেকজন বলে রাজনীতিকের। আসলে রাস্তায় বিভিন্ন আইটেম- যেগুলো যানজট তৈরি করে, সেখানে চোর-পুলিশ খেলা হচ্ছে প্রতিদিন।”

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ‘চিরুনি’ অভিযান

ডেঙ্গুর জন্য থানার সামনে রাখা পুরনো গাড়িকে দায়ী করে মেয়র আতিক বলেন, “আমি থানায় ফোন করলে তারা বলেন- ‘এগুলো মামলার আলামত, সরানো যাবে না’। আমি মহামান্য আদালতের কাছে দাবি জানাচ্ছি- এখন ডিজিটাল যুগ, ছবি তুলে ভিডিও করে আলামতগুলো রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিন। এই গাড়িগুলো থেকে এইডিস মশার উৎপত্তি হয়। দীর্ঘদিন পড়ে থাকে, পানি জমে আর উৎপত্তি হয় এইডিস মশার।”

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে একাধিক কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা অ্যাপস করেছি, নগরবাসীকে আমি আহ্বান জানাবো আপনারা তথ্য দিন। আমরা এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য র‌্যাপিড অ্যাকশন টিম করেছি। তথ্য দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিম চলে যাবে। আপনার বাসার আশেপাশে স্প্রে করবে, যাতে লার্ভা এবং মশা দুটুই ধ্বংস হয়।”

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চলতি সপ্তাহেই চিরুনি অভিযান শুরু হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, “১০টা ১০ মিনিটে প্রতি শনিবার, নিজের আঙিনা করি আমরা পরিষ্কার। এটা আমরা করছি, আপনারাও করুন। সপ্তাহে একদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে আপনারা পরিষ্কার করেন। শনিবারে ছুটির দিন, এই দিন অন্তত একটু নিজের আঙিনা পরিষ্কার করুন।

“১৭ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে চিরুনি অভিযান চালানো হবে, করোনাভাইরাস কমেছে আমরা ডেঙ্গু চাই না।”

হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে গ্রাহকদের আর ভোগান্তি হবে না জানিয়ে আতিক বলেন, “আমরা নো ক্যাশ ট্রানজেকশন ব্যবস্থা চালু করেছি। এখানে কোনো গ্রাহককে সরাসরি হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হবে না। সরাসরি ট্যাক্স দিতে গেলে কর্মকর্তারা সুযোগ পেয়ে যায়।

“তারা তখন নানা ধরনের ব্যবস্থা দেখায়, বিশেষ করে ফ্ল্যাটের মাপ, ড্রইং রুমের মাপ, বারান্দার মাপ। যার কারণে একজন গ্রাহক বিরক্ত হয়ে সরাসরি কন্ট্রাক্টে চলে যায়। এই ব্যবস্থাই আর রাখছি না। নগদ টাকা হবে না, ট্যাক্স হবে অনলাইানে, নো ক্যাশ ট্র্যানজেকশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে।”

খাল উদ্ধারে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, “ড্রোনের মাধ্যমে খালের সীমানা নির্ধারণ চলছে। এখানে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সকল খাল ফিরিয়ে আনা হবে। ড্রোনের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ হলে পিলার বসানো হবে। সেই পিলার কারও ড্রয়িং রুমে পড়তে পারে, কারও বারান্দায় এমনকি থাকার ঘরেও পড়তে পারে।

“রূপনগরের খালের উপরে যারা দখল নিয়ে আছেন সরে যান। অবৈধ দখলদারদের আমি কোনো বৈধ নোটিস দেব না। বিনা নোটিসে আমি খাল উদ্ধার করব, আপনারা সরে যান প্লিজ। রূপনগর খাল উদ্ধার করে তুরাগ নদীতে সংযোগ করব, যাতে করে জলজট কমানো যায়।”

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here